আশুলিয়ায় উপজেলা সভাপতির পদ নিতে যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্যের ছেলেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মুল্যের গাড়ী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আশুলিয়া থানা যুবলীগের সভাপতি পদের আশ্বাসে জিরাবো এলাকার রাজু দেওয়ান নামের এক ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে ওই গাড়িটি দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু নাসিম পাভেলের ছেলেকে।
তবে পদ নিয়ে দেওয়ার শর্তে নয় গাড়িটি কিনে নিয়েছেল বলে দাবী করেন যুবলীগ নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর থেকে আবু নাসিম পাভেল সাভারের স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। গত কয়েক মাস যাবৎ নিজের বাড়িতে একাধিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন। এসব অনুষ্ঠানে সাভারের যুবলীগের বিতর্কিত ও বহিস্কৃতসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরাও তার সাথে অংশ নিতে দেখা যায়। সেই সাথে স্থানীয় কমিটিতে নিজের জায়গা করে নেওয়ার আশায় অনেকেই যোগাযোগ করতে থাকেন তার সাথে। পাশাপাশি প্রেসিডিয়াম সদস্যের বাড়িতে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানেও পদ প্রার্থী বিভিন্ন নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও দেখা মিলে চোখে পড়ার মতো।
এমনই একজন আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার রাজু দেওয়ান। একসময় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও পরে ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। জমি দখল ও চাঁদাবাজীর অভিযোগ থাকলেও তিনি এখন আশুলিয়া থানা যুবলীগের সভাপতির পদপ্রার্থী। এর ফলে নিয়মিত যাতায়াত করছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু নাসিম পাভেলের বাসায়। পদের আশায় নিজের ব্যবহৃত প্রায় অর্ধকোটি টাকা মুল্যের গাড়িটিও দিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ছেলেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা বলেন, রাজু দেওয়ান গত কয়েকমাস যাবৎ যুবলীগ নেতা পাভেলের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। আর সব সময় তিনি সাদা রঙের ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-৭৪৩৮ গাড়িটি নিয়েই যুবলীগ নেতার বাড়িতে আসেন। তবে গত এক মাস যাবৎ তার গাড়িটি যুবলীগ নেতার বাড়িতেই রয়েছে। পরে শুনতে পারেন আশুলিয়া থানার সভাপতি পদের আশায় তিনি ওই গাড়িটি যুবলীগ নেতার ছেলেকে দিয়েছেন।
এদিকে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে পদ দেওয়ার আশ্বাসে বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় আরেক যুবলীগ কর্মী বলেন, মুলত আবু নাসিম পাভেলের ভাই সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ঢাকা জেলা কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ছিলেন। আর তিনি এখন ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক প্রার্থী। নিজের ভাইকে সভাপতি করতে পারলে জেলা কমিটির হাতেই এইসব থানা কমিটি করার দায়িত্ব থাকবে। সে কারণেই অনেকেই কমিটিতে যেন নিজের জায়গা করে নিতে পারে সেজন্যে তাদের সাথে যোগাযোগ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই যুবলীগ নেতা বিভিন্ন পদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনেকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার পায়তারা করছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও এই নেতা ২০১৪ সালের নিজের রিভালবার দিয়ে দশ বছরের এক স্কুল ছাত্রীর পায়ে গুলি করেন। তবে ওই সময় মিস ফায়ারে স্কুল শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলেও দাবী করেন তিনি। এছাড়াও সাভারের মজিদপুর এলাকায় এক যুগের বেশি সময় আগে মাত্র কয়েক শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করলেও প্রভাব দেখিয়ে আরো ২০ শতাংশেরও বেশী জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর গড়ে তুলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে রাজু দেওয়ান বলেন, তিনি যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেই জড়িত রয়েছেন। এছাড়াও গাড়িটি তিনি পদের জন্য দেননি বলেও দাবী করেন। তার ভাই বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি ।
যুবলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু নাসিম পাভেল বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, এছাড়াও রাজু দেওয়ানের ভাইয়ের কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন। তবে কতো টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর চাইলে তিনি না বলে তার সাথে দেখা করার কথাও জানান।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রিয় যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে কেউ যদি পদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গাড়ি নেওয়ার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।