
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং সংবিধানের ৩৫/এ বাতিল করার জন্য ভারত সরকারের ঐতিহাসিক এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাত্র তিন বছরেরও কিছু বেশি সময় পরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে দ্রুতগতিতে মহাসড়ক নির্মাণ, বিশ্বমানের পরিকাঠামোসহ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি এবং স্থানীয় যুবকদের ক্রীড়া কার্যক্রমে আরও অংশগ্রহণের মতো সামগ্রিক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান।
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য নিয়ে হৈচৈ চললেও, পূর্বে দেশটির অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরের মতো মৌলিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহায়তা পর্যাপ্ত ছিল না।
সন্ত্রাস-সম্পর্কিত কার্যকলাপ কঠিনভাবে দমন, কোনও প্রতিবাদ এবং এমকি পাথর ছোড়ার মত ঘটনা না থাকায়, কাশ্মীর উপত্যকার পর্যটন খাত নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
অধ্যাপক পরীক্ষত সিং মানহাস, একজন শিক্ষাবিদ এবং নীতি বিশ্লেষক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “মানুষ এখন এই সত্যটি অনুভব করতে শুরু করেছে যে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে চলেছে বা পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু নীতি কার্যকর হচ্ছে এবং উন্নয়ন হয়েছে। স্পষ্টতই, কাগজে অনেক কিছু কাজ করছে, তবে এই চিন্তাগুলি প্রস্তুত করা দরকার এবং এই চিন্তাগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করা দরকার”।
এদিকে, ৩৭০ ধারা স্থগিত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পর ওই অঞ্চলের অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাজ্যটিকে পৃথক দুটি ইউনিয়নে, অর্থাৎ একটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং আরেকটি লাদাখ করা হয়। তখন থেকেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেয়।
জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়ন প্যাকেজ-২০১৫ এর অধীনে গৃহীত প্রকল্পগুলির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। সড়ক, রেল, সেতু, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে ৫৮,৪৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে ২৯টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
দেশটি যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছরে অমৃতকাল উদযাপন করছে, তখনো এর রেলওয়ে নেটওয়ার্ক রয়ে গেছে ঔপনিবেশিক যুগের নির্মাণ। এই অসঙ্গতি বদলাতে ১,৩২৭ কোটি রুপি ব্যয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে সেতু তৈরি হচ্ছে উদমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের পথে। এছাড়া, কাশ্মীর উপত্যকা এবং এর আশেপাশে একটি করিডোর ট্রানজিট আগামী চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রফেসর মানহাস বলেন, "ইতিমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ স্পষ্টতই বুঝতে পারছে যে তারা ভারতের ইউনিয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তারা এটি চাইছে। আমরা সবাই এক পতাকার নিচে দাঁড়াতে পারি, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।''
প্রাথমিকভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ হয়তো এই মুহূর্তে ভালো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে না, কিন্তু এই সুযোগ-সুবিধা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। বড় রাস্তা তৈরি হচ্ছে এবং সামনে আরো হবে। বিভিন্ন প্রকল্প, অবকাঠামো, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে, বিশেষত তরুণদের আরও ক্ষমতায়িত করবে, অধ্যাপক মানহাস বলেন।
উল্লেখ্য, ভারত সরকার এই অঞ্চলের জনগণের জন্য উন্নত অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশেষ জোর দিয়েছে। কোনো অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সেই অঞ্চলের আত্ম নির্ভরশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে, পরবর্তী ১৫ বছরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটি নতুন সেন্ট্রাল রিজিওনাল প্ল্যান বা কেন্দ্রীয় আঞ্চলিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। একটি নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন স্কিম বাস্তবায়ন পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হলো বাণিজ্যের পাশাপাশি ক্ষুদ্র-উদ্যোগের ক্ষেত্রে একাধিক সুযোগ তৈরি করা। এর মাধ্যমে ভারত সরকার আরও ভারসাম্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মডেল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। উদ্দেশ্য, ৫-৬ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং একটি গতি আনা যাতে উৎপাদন এবং পরিসেবার ক্ষেত্রে আরও অর্থ বিনিয়োগ আসে। এই ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্বল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একটি জম্মু-শ্রীীনগর- লাদাখ জাতীয় মহাসড়কের কাজিগুন্ড-বানিহাল টিউব টানেল এবং আরেকটি সোনমার্গ এবং গাগাঙ্গীরের মধ্যে জেড-মোরহ টানেল।
একই সাথে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক খাতের দিকে দৃষ্টি দেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমাজের সকল শ্রেণীকে একত্রিত করা হয়েছে এবং সমান আচরণ এবং অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোন অযৌক্তিক শ্রেণিবিন্যাস নেই তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক দলিত, উপজাতি এবং নারী, অতীতকাল থেকে পশ্চাৎপদ অবস্থায় ছিল, এখন তাদের সুরক্ষা এবং সম্মান নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ধরনের অনেক অধিকার কার্যকর করার জন্য ১৫৩টিরও বেশি আইন বাতিল করে ১৬০টিরও বেশি কেন্দ্রীয় কল্যাণ আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। গ্রামীণ স্বনির্ভর নারীদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে যাতে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
এছাড়াও ইনডিয়ান ইনিস্টিটিউট অব টেকনলজি জম্মু এবং ইনডিয়ান ইনিস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট জম্মু ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। সরকারী ডিগ্রি কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা ৯৬ টি থেকে ১৪৭ টিতে উন্নীত হয়েছে। কাশ্মীরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য নেওয়া বর্তমান ভারত সরকারের এই উদ্যোগগুলো প্রংসিত হচ্ছে বিশ্লেষকদের দ্বারা।