অটোফেজি বা আত্মভক্ষণ কী? এটি মূলত গ্রিক শব্দ, যার বাংলা অর্থ হলো-‘আত্মভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা’! বিষয়টি শুনতে ভয়ানক হলেও এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে পরিষ্কার করার একটা প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন হয় কোষীয় পর্যায়ে (জীবদেহের গঠন ও কাজের একক হচ্ছে কোষ)। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই আত্মভক্ষণ কোষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং কোষকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। যদি এই আত্মভক্ষণ প্রক্রিয়াতে কোনো সমস্যা হয়, তবে শরীরে নানা রকম রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
অটোফেজি কীভাবে করতে হয় এবং ফলাফলে আপনি কী পাবেন? আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি/সংশ্লেষ হয় এবং এই তৈরি হওয়া প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য তার (প্রোটিনের) গঠনটি অ্যামিনোএসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক গঠন না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে এবং নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ প্রোটিন সঠিকভাবে সংশ্লেষ হতে পারে না। ফলে এদের ধ্বংস করা, শরীর থেকে বের করে দেওয়া কিংবা অন্য উপায়ে কাজে লাগানো জরুরি। কেননা শরীরে এরা থাকলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে। চিন্তা করার কিছু নেই, আপনার দেহের অটোফেজি প্রক্রিয়া এ ক্ষতিকারক প্রোটিনকে ধ্বংস করে বা কাজে লাগায়। অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরকে কার্যকরী করে রাখে, দুর্বল অঙ্গাণু থেকে মুক্তি দেয় এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে। শরীরে এ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত থাকলে ক্যান্সার কিংবা নানাবিধ স্নায়ুবিক রোগ হতে পারে। এককথায় বলা যায়, অটোফেজি রোগ-প্রতিরোধ করে এবং আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।
আপনি অটোফেজি কীভাবে করবেন? দীর্ঘক্ষণ উপবাসে থাকা বা রোজা রাখা, পরিমাণে কম কিংবা কম ক্যালরির খাদ্য খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম করা ও নিয়মিত সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানোর মাধ্যমে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হয়। বুঝতেই পারছেন, এ প্রক্রিয়া শরীরে চালু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রোজা বা উপবাস। যখন শরীরে খাবারের সংকট তৈরি হয় তখন অটোফেজি প্রক্রিয়াটি চালু হয়। আপনার বাসায় অনেক ভালো টাটকা খাবার থাকতে আপনি নিশ্চয়ই পুরাতন খাবার খাবেন না! তেমনি আপনি যখন রোজা রাখবেন, শরীরে খাদ্য সংকট ঘটাবেন- তখন শরীরে জমে থাকা সেসব অপ্রয়োজনীয় ও অপরিপক্ক কোষগুলোকে শরীর খেয়ে নিবে। এভাবেই আত্মভক্ষণের মাধ্যমে আপনি রোগ থেকে বাঁচবেন, আর তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন।