
একটা সময় ছিল, যখন এশিয়ায় ক্রিকেট বলতে কেবল দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটকে বোঝানো হতো। তবে সেই দিন পেরিয়ে ক্রিকেট এখন ছড়িয়ে পড়েছে আরব ভূখণ্ডে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শুরু করে সৌদি আরবের মতো দেশ মনোনিবেশ করেছে ক্রিকেটে। চেষ্টা করছে বিশ্বমঞ্চে উঠে আসার। আর দেশটির এই চেষ্টায় কাজে লাগতে পারেন সেখানে থাকা পাকিস্তানি ও ভারতীয়রা।
সৌদি আরবে পাকিস্তানি ও ভারতীয়দের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর এ কারণেই সৌদি আরব ক্রিকেট ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানিদের ক্রিকেট ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক দুর্দান্ত দল হয়ে উঠতে পারে সৌদি আরব।
পাকিস্তানের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার তৈরি করার। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসে বিপুল পরিমাণ বিশ্বমানের পেস বোলার এসেছেন। যাঁরা ক্রিকেট বিশ্বে সুইং, গতি ও আগ্রাসী মনোভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আমিরেরা পাকিস্তানের ক্রিকেট তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটেই নিজেদের পদচিহ্ন রেখে গেছেন। ফলে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে সৌদি জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং বিভাগ দারুণভাবে উপকৃত হতে পারে।
অন্যদিকে ভারতের রয়েছে বিশ্বমানের সব ব্যাটসম্যান তৈরির ইতিহাস। বিশ্ব ক্রিকেটের মাস্টার-ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে আধুনিক ব্যাটিংয়ের মায়েস্ত্রো ভিরাট কোহলি ভারতের তৈরি। ক্রিকেট উইলো হাতে ২২ গজের পিচে তাদের শৈল্পিক কারুকার্য, তাদের কুশলতা ও ইনিংস বিল্ড-আপের যে ইতিহাস-নজির ভারতীয়রা দেখিয়েছে, তা অনন্য। ব্যাটিং যেন ভারতীয় ক্রিকেটের ডিএনএতে পরিণত হয়েছে। ফলে ভারতীয়দের সংস্পর্শে সৌদি জাতীয় দল ব্যাটিং সাইড নিয়ে নির্ভার হওয়ার পথ খুঁজে পেতে পারে।
সৌদি আরবের ক্রিকেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান প্রিন্স মিশাল আল-সৌদের ক্রিকেট নিয়ে দারুণ বোঝাপড়া রয়েছে। আর তাই তিনি হয়তো সৌদি ক্রিকেটের উন্নয়নে ভারত-পাকিস্তানিদের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টিকে আলোচনায় এনেছেন। সৌদি ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তিনি এরই মধ্যে এ দুই দেশে সাবেক তারকা ক্রিকেটার, বিভিন্ন ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক এবং কূটনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যাতে করে এই দুই দেশের ক্রিকেট মেধা থেকে সৌদি আরব উপকৃত হতে পারে।
প্রিন্স মিশাল এরই মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠান ও পাকিস্তানের তারকা বোলার ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তান প্রিমিয়ার লীগের দল কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটরসের মালিক নাদিম ওমর ও রাজস্থান রয়্যালসের মালিক মনোজ বাদালের সঙ্গে। ২০২৩ সালের মার্চে ওয়াসিম আকরাম আরব নিউজকে বলেছিলেন, তিনি সৌদি আরবে ক্রিকেটের উন্নতির বিষয়ে আশাবাদী এবং দেশটির ক্রিকেট মেধার পরিস্ফুটন দেখতে মুখিয়ে আছেন। এর আগে তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো রিয়াদে যান এবং প্রিন্স মিশালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সৌদি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে আলোচনা করেন।
চলমান এশিয়া কাপ সৌদি ক্রিকেটের উন্নয়নে পাকিস্তানি ও ভারতীয়দের কাজে লাগানোর গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনেছে। কারণ এই টুর্নামেন্টে নেপালের মতো দলও গ্রুপ পর্বে খেলেছে। সৌদি ক্রিকেট যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে হয়তো দলটি এই আসরের যেকোনো সংস্করণে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এই টুর্নামেন্ট সৌদি আরবের মতো দলগুলোকে এশিয়ার বড় ক্রিকেট দলগুলোর বিপরীতে লড়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়, যা ছোট দেশগুলোর ক্রিকেটের উন্নতি, প্রকাশ এবং স্বীকৃতির মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।
এশিয়া কাপ শেষের পথে। এই আসরে অংশগ্রহণ সম্ভব না হলেও সৌদি আরব অন্তত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। সেখানে তাঁরা ভারত-পাকিস্তানিদের সহায়তা তো বটেই, এমনকি সৌদি আরবে থাকা প্রবাসী ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী দল গঠন করতে পারে। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া গালফ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে সৌদি আরব ভালো করতে পারে। এই আসর সৌদি আরবের ক্রিকেট শক্তিমত্তা প্রদর্শনের একটি দারুণ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে।
আরব নিউজ থেকে অনূদিত