শারীরিকভাবে সুস্থ বা নীরোগ থাকা মানেই ফিট থাকা নয়। শারীরিক ফিটনেসের ধারণাটি আরো ব্যাপক। আপনি কি নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট মনে করেন? ঝটপট নিচের পয়েন্টগুলো নিজের সাথে মিলিয়ে দেখুন আপনি শারীরিকভাবে কতটা ফিট!
নীরবে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারেন?
ক্ষুধা পেলে কি চোখে অন্ধকার দেখেন? সময়মতো খাবার না পেলে কি মেজাজ খারাপ হয়ে যায়?
ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারা বাড়াবে ফিজিকেল ফিটনেস। ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে পারা এক অতিমানবীয় গুণ বটে! তবে একটু চেষ্টা করলে এই গুণটি আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে কার্যকর ট্রেনিং হতে পারে উপবাস। সপ্তাহে এক/দু'দিন উপবাস শারীরিক ও মানসিক ভাবে আপনাকে চাঙ্গা ও উজ্জীবিত রাখবে, বাড়াবে ফিজিকেল ফিটনেস।
দুয়েক রাত নির্ঘুম কাটালে কি অসুস্থ হয়ে পড়েন?
সুস্বাস্থ্যের জন্যে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়া এবং ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। তবে যুক্তিসঙ্গত কারণে এক/দুই দিন এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটতেই পারে। যেমন পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়া বা পেশাগত বিশেষ কারণে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করা।
এভাবে দুয়েক রাত নির্ঘুম কাটালে যদি পরের দিনগুলোতে শরীর ম্যাজম্যাজ অনুভব করেন তাহলে আপনাকে ফিটনেস বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে!
এজন্যে শরীরকে 'শক এবজর্বার' বা ঘাতসহ হিসেবে তৈরি করা আবশ্যক। অর্থাৎ শারীরিক ফিটনেসকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যখন হঠাৎ রাত জাগার মতো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার শরীরে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
একটানা কতক্ষণ কাজ করতে পারেন?
শারীরিক ফিটনেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হলো একটানা বিরক্তি ও ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাবার ক্ষমতা। সারা দিনের ক্লান্তিহীন কর্ম ব্যস্ততা আপনাকে রাখবে শারীরিকভাবে ফিট।
সফল মানুষদের লাইফস্টাইল পর্যালোচনা করলে দেখবেন, তাদের কারোরই দৈনিক কর্মঘণ্টা নটা-পাঁচটা ছিল না। বরং ঘড়ির কাঁটার থেকে এক কদম এগিয়েই থেকেছেন তারা সবসময়!
এক্ষেত্রে বলা যায় ভারতের মিসাইলম্যানখ্যাত বিজ্ঞানী ও ১১তম রাষ্ট্রপ্রধান এ পি জে আবদুল কালামের কথা। দিনে না ঘুমিয়ে ১৮ ঘণ্টা লাগাতার কাজ করে যেতেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে একবার তার প্রজেক্ট পরিচালক তাকে হুমকি দিয়েছিল তিন দিনের মধ্যে প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে না পারলে তার স্কলারশীপ বাতিল হবে! আবদুল কালাম টানা তিনদিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে লেগে ছিলেন সেই প্রজেক্ট দাঁড়া করানোর জন্যে। দিনে শুধু এক ঘণ্টা বিরতি নিয়েছেন। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন, স্কলারশীপও বহাল থেকেছে!
প্রায়শই কি ক্লান্ত বা ঘুম ঘুম অনুভব করেন?
প্রায়শই ক্লান্তিভাব বা ঘুম ঘুম অনুভব করা শারীরিকভাবে আনফিট হবার এক নম্বর লক্ষণ! আর এর অন্যতম কারণ রাতে গভীর ঘুমের অভাব এবং ভুল খাদ্যাভ্যাস। রাত জেগে স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রাখা আমাদের পর্যাপ্ত ঘুমোতে দেয় না। কারণ এই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইজগুলো থেকে বিচ্ছুরিত নীল আলো গভীর ঘুমের অন্তরায়।
অন্যদিকে চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার বেশি খেলে তা ঘুমকে ব্যহত করে। কারণ চিনিজাতীয় খাবার মস্তিষ্কে অরিক্সিন (Orexin) তৈরিতে বাধা দেয়। অরিক্সিন আমাদের সজাগ থাকতে সাহায্য করে। কাজেই বেশি বেশি চিনি গ্রহণ করলে সবসময় ঘুম ঘুম ও ক্লান্তিভাব অনুভূত হয়।
প্রায়শই কি অসুস্থ থাকেন?
বছরের ছয় মাসই জ্বর সর্দি-কাশি পেটের পীড়ায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম না! শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি দুর্বল হয়, তবে খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। আর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শারীরিক ফিটনেসের অভাবের বড় নির্দেশক।
বিশেষজ্ঞদের মতে বছরে যদি কারও তিনবার সর্দি লাগে আর তা সেরে উঠতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় নেয় তাহলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ দুর্বল।
অন্যদিকে, ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অ্যালার্জি, অ্যাজমা অ্যান্ড ইমিউনোলজি'-এর তথ্য অনুসারে কারো যদি বছরে দু'বার অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় কিংবা সামান্য ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ যদি গুরুতর আকার ধারণ করে তাহলে সে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত রোগে ভুগছে।
উপরোক্ত মানদণ্ডগুলোর সাথে আপনি আপনার অবস্থা মিলিয়ে নিয়েছেন; এবার পর্যালোচনা করুন আপনার ফিটনেস। যদি আপনি যথার্থই ফিট হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন!
আর যদি তা না হন তাহলেও ঘাবড়াবার কিছু নেই! বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মেডিটেশন, ইয়োগা এবং দমচর্চার মাধ্যমে আপনি সহজেই বাড়িয়ে নিতে পারেন আপনার শারীরিক ফিটনেস।