মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমরা জানি, যারা রাষ্ট্রপতি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদের সঙ্গে সব সময় ক্যামেরাম্যান থাকে। সেটা আজকের যুগে নয় আগেও ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মরদেহের কেন ছবি নেই?
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ক্লাবে মুজিবনগর এবং বিসিএস মুক্তিযোদ্ধা-কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির দশম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নির্বাচিত সরকারের অধীনে যুদ্ধ করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ওয়ার কমিশনের মাধ্যমে যুদ্ধ করতে হবে। তার এই বক্তব্যের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান ওসমানী সাহেব তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। তিনি পরে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব ফিরে পান। সুতরাং তার ষড়যন্ত্র নতুন কিছু না। অন্যদের সঙ্গে জিয়ার যুদ্ধের ভূমিকার এখানেই পার্থক্য।
তিনি বলেন, খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলবেন। এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সময়-সুযোগ করে পরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করবেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রশ্ন করতেই পারেন, সেই সময় আমরা কেন নিশ্চুপ ছিলাম। আমাদের যে কোনো ভুল হয়নি তা কিন্তু না। আমরা সময়মতো সেই সব চিহ্নিত ব্যক্তিদের সঠিক বিচার করতে পারলে পরবর্তীতে হয়তো ১৫ আগস্টের মতো বেদনাবিধুর দিন দেখতে হতো না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একটি ছোট্ট অংশের বিচার হয়েছে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। কিন্তু এর পেছনে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল। শুধু জিয়াউর রহমান খন্দকার মোশতাক নয় আরও অনেকে ছিলেন। যারা চিহ্নিত হয়নি। ইতিহাসের জন্য এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। কারওর প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। ইতিহাসের জন্যই আমরা সঠিক তথ্যটি খুঁজে পেতে চাই।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ব্যক্তি জিয়াউর রহমানের ওপর আমার কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না। বিএনপি ইতিহাস বিকৃত করছে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে মারা গেছেন। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সমর্থন করি না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের হত্যার পর তার দলই ক্ষমতায় ছিল। কিছুক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম তাদের হাতের বাইরে গেলেও পরবর্তীতে তারা সেটিও দখল করে ক্ষমতায় দখল করে। তাহলে জিয়াউর রহমানের মরদেহের কোনো ছবি থাকবে না কেন?
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের মরদেহের পোস্টমর্টেম হয়েছে। কিন্তু পোস্টমর্টেমের সময় তার মরদেহের কোনো ছবি তোলা হয়নি। পোস্টমটেম কোন হাসপাতালে হয়েছে আমরা সেটা জানতে চাই। পোস্টমর্টেমের একটি ফরমেট থাকে সাদা কাগজে পোস্টমর্টেম করা যায় না। সেটি প্রমাণ দেখাতে পারেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আবেগতাড়িত হয়ে বলেছেন, তিনি নিজেও জিয়াউর রহমানের মরদেহ দেখেছেন। আরে ভাই মরদেহ যদি দেখে থাকেন তাদের ছবি তুললেন না কেন?
তিনি বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানের জিয়াউর রহমানের মরদেহ নেই। তারা মিথ্যাচার করে জাতিকে ধোঁকা দেবে-এটা হতে পারে না। জিয়াউর রহমানকে আপনারা সম্মান করতেই পারেন, কিন্তু মিথ্যাচার করে বানোয়াট কবর বানিয়ে সম্মান দেওয়া উচিত নয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ফখরুল সাহেব প্রশ্ন তুলেছেন, আমি কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এর উত্তর আমি দেব না। আপনার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে জিজ্ঞেস করুন, আমি কোথায় যুদ্ধ করেছি। তিনি আমার অধীনে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।