খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি নেই। এর ফলে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণে বেড়েই চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এখন সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা প্রায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর শেষে গত জুনে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৫১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকের নিজস্ব প্রাক্কলিত হিসাব। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২২৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেদিক থেকে এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলোচ্য সময়ে সার্বিকভাবে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও বিতরণকৃত মোট ঋণের তুলনায় বা শতাংশের হিসাবে খেলাপি ঋণের হার কমেছে। গত ২০২৩ সালের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ছিল বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি বছর জুন শেষে এটি কমে ১৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে ব্যাংকটিতে এক বছরে খেলাপি ঋণের হার কমেছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ।
জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রধান সমস্যা হচ্ছে-শ্রেণিকৃত ঋণের আধিক্য, গুণগত ঋণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে শ্লথগতি এবং শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে আদায়।
এছাড়া ব্যাংকের আরও কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা। মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী করা। সব পর্যায়ে শুদ্ধাচার নীতি পরিপালনসহ ব্যাংকের সামগ্রিক কার্যক্রমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতা বাড়ানো। এবং ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মানোন্নয়ন ইত্যাদি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সোনালী ব্যাংক। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ৩৫ কোটি টাকা আদায় করবে। গত জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ৬ হাজার ৬০৭ কোটি ১১ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায় ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে সোনালী ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫০০ কোটি টাকা এবং ৬৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি ৩৭১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ এবং অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আদায় করেছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
গত জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট লোকসানী শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫টি। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকের লোকসানী শাখার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অর্থবছর শেষে এ সংখ্য ১৭টি হতে পারে।