একসময় মিলিয়নিয়ার বা কোটিপতি শব্দের প্রচলন ছিল না। ১৭ শতকের কিছু সময় পর্যন্ত মিলিয়নিয়রের অস্তিত্ব ছিল না। ডে’জ অব্য দ্য ইয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ১৭১৯ সালে জন ল মিসিসিপি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর দারুণ সফলতা পান। আর তিনি প্রথম ব্যক্তি হয়েছিলেন যাকে মিলিয়নিয়ার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। জন ল’র এক মিলিয়ন ফ্রাঙ্কেরও বেশি অর্থ ছিল এবং তিনিই মিলিয়নিয়ার হিসেবে পরিচিত পাওয়া প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। পরবর্তী কয়েক বছর ‘মিলিয়নিয়ার’ শব্দটি ধনী ও বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
আর আজকের পৃথিবীতে অর্থের পিছে ছোটেন না, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম। তবে জীবনভর ছোটাছুটি করেও আক্ষরিক অর্থে বিত্তবান হন না সবাই। যারা কোটিপতি হতে পারেন, তাদের ছোটাছুটি আর অন্যদের ছোটাছুটির মধ্যে নিশ্চয়ই বিরাট তফাত থাকবে। প্রায় সব কোটিপতিরাই পরিশ্রমী এবং মনোযোগী। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো কোটিপতি হওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। আর কোটিপতিদের মধ্যে কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যা তাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোটিপতিদের ৫টি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যে মিলগুলো—
মিতব্যয়ী: কোটিপতিরা অর্থ ব্যয় করতে পছন্দ করেন না। বেশিরভাগ কোটিপতি মিতব্যয়ী। তারা ডিসকাউন্ট এবং কুপনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কোটিপতিরা বিশ্বাস করেন যে, এটি সম্পদ ধরে রাখার একটি উপায়।
চশমা পরে না: চশমা পরাকে নির্বোধ হওয়ার লক্ষণ হিসাবে দেখা হয়। বেশিরভাগ কোটিপতি আসলে চশমা পরেন না। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির মধ্যে, মাত্র দুজন চশমা পরেন। তারা হলেন ওয়ারেন বাফেট ও বিল গেটস।
কুম্ভ রাশি: অধিকাংশ কোটিপতি কুম্ভ রাশির হয়ে থাকে। তাদের বেশিরভাগের জন্ম ২০ জানুয়ারি এবং ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। গো কমপেয়ার বিশ্লেষণ অনুসারে, ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফোর্বসের শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কুম্ভ রাশির।
বড় পরিবার: বেশিরভাগ কোটিপতিদের তিন থেকে পাঁচটি সন্তান থাকে। তাদের বেশিরভাগই একটি বড় পরিবার বজায় রাখতে পছন্দ করেন। গো কমপেয়ার বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রায় ২১ শতাংশ কোটিপতির তিন বা তার বেশি সন্তান রয়েছে।
সস্তা গাড়ি চালায়: বেশির ভাগ ধনকুবেররা দামি গাড়ি চালায় না। তারা সাধারণ বা সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি চালায়। কারণ তারা তাদের সম্পদ সঞ্চয় করে।
কোটিপতিদের মধ্যে মিল যেখানে:
কোটিপতিরা এতো সম্পদের মালিক হওয়ার পরে কেমন হয় তাদের জীবনধারা? অর্থের সঙ্গে তো দায়িত্বও বাড়ে। কী করেন তারা সারা দিন? কীভাবে ভারসাম্য রাখেন জীবনে? নিজ উদ্যোগেই ধনী হয়েছেন, এমন শতাধিক ব্যক্তিসহ সফল দুই শ জনের জীবনধারা বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। এই বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, নিজের ভালো থাকাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন তারা। সময়ের ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করেন, যেন সবকিছু সামলানো যায় ঠিকঠাক। উল্লেখযোগ্য আর কী কী জানা গেল জেনে নিন।
মিরাকল মর্নিং: সকালটা হলো সারা দিনের ভিত্তি। ধনীদের একটা বড় অংশ তেমনটাই বিশ্বাস করেন। দিনের প্রথম আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় তারা শরীর এবং মনের সতেজতার জন্য ব্যয় করেন। কেউ হাঁটতে হাঁটতে শোনেন পডকাস্ট, কেউ শরীরচর্চার সময় শোনেন কোনো অডিও অনুষ্ঠান। কেউ আবার ‘এক্সারসাইজ বাইক’ চালাতে চালাতে উদ্দীপনামূলক বার্তা পড়া দিয়ে শুরু করেন নিজের দিন। কারও কাছে সকালটা হলো ‘দ্য মিরাকল মর্নিং’।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ধনীদের মধ্যে কারও কাছে স্বাস্থ্যই সম্পদ, কারও কাছে সম্পর্কগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যিনি যে বিষয়কে গুরুত্ব দেন, সেই বাবদ সময় বরাদ্দ রাখেন ঠিকঠাক। যিনি সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তিনি কিন্তু হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও প্রিয়জনকে সময় দেন, সন্তানের আনন্দের প্রতি যত্নশীল হন, পারিবারিক আয়োজনের জন্য সময় রাখেন। বার্ষিক যে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে তিনি ছুটছেন, সেই লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যান একটু একটু করে। বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য রোজকার ছোট ছোট কাজ নির্দিষ্ট করে ফেলেন তারা। নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সকাল সকালই বসে যান পরিকল্পনা করতে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সকালটাই সেরা সময় তাদের কাছে; মাল্টিটাস্কিং না করে একদিকে মনোযোগ দেন তারা।
মিটিং করে সময় নষ্ট করেন না: কোটিপতিদের জীবনধারা বিশ্লেষণ করে ফোর্বস বলছে, তাদের মধ্যে মিটিং করার প্রবণতা কম। স্টিভ জবস বা মার্ক জাকারবার্গের হাঁটতে হাঁটতে মিটিং সেরে নেওয়ার কথা অনেকেই জানেন। মিলিয়নিয়াদের কাজের ধরন থেকে বোঝা যায়, কাজকে ফলপ্রসূ করতে লম্বা দৈর্ঘ্যের মিটিংয়ের প্রয়োজন হয় না।
ই–মেইল প্রসেসিং টাইম: সারাদিন নিজের ই–মেইল আর মুঠোফোনের নোটিফিকেশন দেখেন না মিলিয়নিয়াররা। বরং তারা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখেন ই–মেইলের জবাব দেওয়ার জন্য। এভাবে কাজ ভাগ করে নেওয়ার ফলে অনেকটা সময় বেঁচে যায় তাদের।
কাজের সময় কাজ, বিশ্রামের সময় বিশ্রাম: অফিসের সময় শেষ হয়ে গেলেও হয়তো আপনার এমন অনেক কাজ রয়ে যায়, যা করা উচিত, যা করা প্রয়োজন কিংবা যা করলে ভালো হয়। তবে ধনকুবেররা কিন্তু এসব কাজ করার পেছনে বাড়তি সময় ব্যয় করেন না। কাজের সময় শেষ হলেই তারা বাড়ি চলে যান। সময়মতো খেয়ে নেন রাতের খাবার। রাত হলো তাদের ‘রিচার্জ’ হওয়ার সময়। রাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন তারা। পরের দিনটা শুরু করেন পূর্ণ উদ্যমে।