
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মা ও মেয়েকে ধর্ষণ মামলার রায়ে ‘জিনের বাদশা’ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ করে টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। এ ছাড়া এই মামলায় আদালত ২ জনকে খালাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমান এ রায় প্রদান করেন। রায় প্রদানের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্ত ৩ আসামি হলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেন (৪০), একই গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে এমদাদুল হক (৪০) ও পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর পার্বতীপুর গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে খাজা মিয়া (৩৮)।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম (২৫) ও আজিজুল ইসলাম (৩৫)।
মঙ্গলবার বিকেলে রায় প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহিবুল হক সরকার জানান, খাজা মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা ছাড়াও তাকে আরও ৮ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত ৩ জনই ‘জিনের বাদশা’ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন এবং মা ও মেয়েকে ধর্ষণ করে।
আইনজীবী মহিবুল হক সরকার মামলার বিবরণের বরাত দিয়ে জানান, দীর্ঘদিন আগে খাজা মিয়া গভীর রাতে জিনের বাদশার পরিচয় দিয়ে জামালপুর জেলার বাসিন্দা এক মা ও তার মেয়েকে ৩টি নম্বর থেকে ফোন দেয়। গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৪ দফায় বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ গুপ্তধন বুঝিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৬ মে দুপুরে ফোন দিয়ে মা ও মেয়েকে গোবিন্দগঞ্জে মাজারে আসতে বলেন। তাদের কথামত একই সালের ১১ মে তারা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে আসেন। ‘জিনের বাদশা’ প্রতারক চক্রের সদস্যরা ওইদিন রাতেই তাদেরকে জনৈক এক মাজারে নিয়ে যাবার জন্য মোটরসাইকেলে তোলেন। তারপর ভোররাতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে ‘জ্বীনের বাদশা’ প্রতারক চক্রের সদস্যরা মা ও মেয়েকে পালা করে ধর্ষণ করে। পরে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে মা ও মেয়েকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে নামিয়ে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ধর্ষণের শিকার মা বাদি হয়ে একই সালের ১২ মে অজ্ঞাত কয়েকজন আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খাজা মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃত খাজা মিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বেলাল হোসেন ও এমদাদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। পরে আসাদুল ও আজিজুলকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।