জাতীয় পর্যায়ে ফয়সালা হলেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোর নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ গ্রহণের পর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবনা প্রশ্নে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ, ওটা নিয়ে তো সিরিয়াস বিতর্ক আছে। বাইরে চলছে। এই বিতর্কের ফয়সালা হোক। ভোট তো আরও দেরি আছে। কাল-পরশু তো ভোট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের বিষয়ে, ফয়সালার বিষয়ে আমরাও অপেক্ষা করছি। ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তা হলে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। এই মুহূর্তে বিগত সরকারি দল ও সহযোগীদের নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। জাতীয় পর্যায়ে একটা ফয়সালা হোক। তা হলে ইনশাআল্লাহ, সময় এলে আপনারাও দেখতে পাবেন।
তিনি বলেন, সরকারের কোনো নিজস্ব এজেন্ডা নেই। কাজেই আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আর রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছর ধরে বলছে তারা জনগণের ভোটের অধিকার চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা এই যুদ্ধ ১৫ বছর ধরে করছে। তারা তো জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা তাদের বলবো, আমরা আপনাদের এই কাজটি করে দিতে চাই। তারা তো না করতে পারবে না।
মতবিনিময়ের শুরুতে সিইসি বলেন, এই প্রথম খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমাদের নিয়োগ হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে নিয়োগ হয়েছে। আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না এই দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। টিভিতে দেখে প্রথম জানতে পারি। জাতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কেউ কেউ এটাকে দ্বিতীয় বিপ্লবও বলে থাকেন। এই ক্রান্তিকালে এই গুরুদায়িত্বটা ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। আমি টিম মেম্বারদের বিষয়ে যতটা জানতে পেরেছি- তাতে একটি সলিড টিম নিয়ে কাজ করতে পারব।
নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্বটা সেরেছি। কীভাবে সামনের দিকে এগোবো তার একটি প্রাথমিক ধারণাও পেয়েছি। টিম মেম্বারদের লেভেল অব কনফিডেন্ট ভেরি হাই। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়েছে তা পালনে ইনশাআল্লাহ সচেষ্ট থাকব। জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমরা নিজেদের নিয়োজিত রাখব।
নাসির উদ্দীন আরও বলেন, আমি আগেও বলেছি, জাতির প্রতি যে ওয়াদা- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বশক্তি নিযুক্ত করব। নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার, তার সবই করা হবে।
নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমার জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই। আমি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। অনেক কঠিন কাজ করতে হয়েছে। ব্যর্থ হইনি। ইসির দৃশ্যমান যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে- এর বাইরে আরও বহুবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেটা আমরাও জানি না। নিত্যনতুন অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। এ চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।
এর আগে, দুপুরে শপথ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু নির্বাচন করতে গেলে আবশ্যকীয় কিছু সংস্কার তো লাগবেই। কিছু সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত অবাধ নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
নাসির উদ্দিন বলেন, আমি এই দায়িত্বটাকে জীবনে বড় একটি অপরচুনিটি হিসেবে দেখছি। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা ফ্রি-ফেয়ার একটি নির্বাচনের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে। অনেক আন্দোলন করেছে বিগত বছরগুলোতে এবং অনেকে রক্ত দিয়েছে। আমি তাদের ফ্রি-ফেয়ার এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর জন্য আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।
রিফর্ম এবং নির্বাচনের আয়োজন করতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। আগে আমি দায়িত্বটা বুঝে নিই।
তার আগে, রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনসহ ৪ নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন। তাদের শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহ্মদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তার আগে গত ২১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইদিন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীনকে প্রধান (সিইসি) করে গঠন করা হয় নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ইসি গঠনে ছয় সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (পিএসসি) মোবাশ্বের মোনেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।
পরে ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে ইসি গঠনে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ নামের তালিকা দেওয়া হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ওই তালিকা থেকে ৫ জনকে নিয়ে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়।