
বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্টের যাত্রাপথে বেজ ক্যাম্পে বসে আছেন মিলন পাণ্ডে। উঁচু-নিচু পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝলমল সফেদ বরফ। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে হারিয়ে গেছে মন। এমন সময় হঠাৎ দেখতে পেলেন, একটি মই আকাশ থেকে পড়ে সামনেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তিনি খানিকটা অবাকই হলেন। পরে জানা গেল, শুধু মই নয়, পর্বতারোহীদের কাছে থাকা অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এভাবেই হারিয়ে যায় বরফের গর্ভে।
মিলন পাণ্ডে ড্রোনচালক। এভারেস্টের বিপৎসংকুল পথে তিনি পর্বতারোহীদের বরফ ভাঙার কুড়াল, রশি, অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা ভারী জুতার মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করেন ড্রোনের সাহায্যে। তাঁর এই দক্ষতা আশার আলো দেখাচ্ছে স্বপ্নচারীদের।
বেজ ক্যাম্প ও ক্যাম্প ওয়ানের মধ্যে খুম্বু আইসফলের ভয়ংকর এলাকায় মিলনের ড্রোন পর্বতারোহীর চলাচল ও চিকিৎসকের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। এতে কমছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
দশকের পর দশক শেরপারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভারেস্টের পথ তৈরি করেছেন। সেই পথ ধরে নবাগত পর্বতারোহীরা স্বপ্ন দেখেন সর্বোচ্চ চূড়া জয়ের। এই পথে অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সেই যাত্রাপথকে এখন নিরাপদ করতে এয়ারলিফট প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন পাণ্ডে। এভাবেই এভারেস্টের কষ্টকর পথ একদিন হয়তো নিরাপদ হয়ে উঠবে সব আরোহীর জন্য।
এভারেস্টের বেজ ক্যাম্প সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার বা ১৭ হাজার ৫৯৮ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ক্যাম্প ওয়ানের উচ্চতা ৬ হাজার ৬৫ মিটার বা ১৯ হাজার ৯০০ ফুট। দুটি পয়েন্টের মধ্যে আকাশপথের দূরত্ব ১.৮ মাইল। শেরপাদের এই যাত্রায় সময় লাগে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। আর পাণ্ডে ড্রোনের সাহায্যে জিনিসপত্র তুলে দেন মাত্র ছয় থেকে সাত মিনিটে।
পর্বতারোহীদের পথ দেখিয়ে আসার কাজ করা সংস্থা ইমাজিন নেপালের কর্মকর্তা মিংমা জি শেরপা জানান, এভারেস্টের পথে ২০২৩ সালে তুষারধসে প্রাণ যায় তাঁর তিন বন্ধুর। বরফের গ্রাসে হারিয়ে গেছে তাদের মৃতদেহ। এ ঘটনার পর তিনি পর্বতারোহীদের সহায়তার জন্য বিকল্প কোনো পদ্ধতি কাজে লাগানো যায় কিনা, তা চিন্তা করেছিলেন। তিনি বলেন, গহিন পর্বতে পথ খুঁজে বের করা কিংবা সরঞ্জাম নিয়ে ওঠানামায় অন্তত ২০ বার একই পথে যাতায়াত করতে হয়। চীনের পর্বতারোহীরা যদি এই কাজে ড্রোন ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পারব না?
এয়ারলিফট নেপালের সিইও রাজ বিক্রম বলেন, ‘২০২৪ সালের এপ্রিলে চীনের তৈরি দুটি ড্রোনের সাহায্যে পর্বতে এয়ারলিফট কার্যক্রম শুরু করি। এই কাজে সবচেয়ে বড় বাধা বাতাসের গতি ও দৃশমানতা সংকট।’
পাণ্ডে ও বিক্রম স্বপ্ন দেখেন, এই পর্বতে পেশাদার আরোহীদের জীবন আরও নিরাপদ করবে তাদের ড্রোন। আরও বেশি লোককে পর্বতারোহণের মতো কঠিন কাজে উদ্বুদ্ধ করবে। সূত্র: সিএনএন।