
আমাদের দেশে প্রচলিত আছে দুপুরে খাওয়ার পরে খানিকটা সময় ঘুমানো। বাংলায় যেটিকে বলা হয় ভাত-ঘুম। অনেকে বিষয়টিকে ভিন্ন ভাবে নিলেও এর রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। এবং সেটা সব বয়সের মানুষের জন্যই। যার বৈজ্ঞানিক প্রমাণাও রয়েছে অনেক।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বেশি দিন বেঁচে থাকার ব্যাপারেও সাহায্য করবে ভাত-ঘুম। সারাদিনের নানা কাজের চাপের মাঝে কম্পিউটারের ‘রিফ্রেশ বাটনের’মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। তার মতে ভাত-ঘুমের সময়কাল হওয়া উচিৎ ১০ থেকে ২০ মিনিট।
বাংলাদেশে ভাত-ঘুমের সংস্কৃতিকে ভিন্ন চোখে দেখলেও এর সুন্দর সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। ভাষায় ভাত-ঘুমকে ইউরোপের অনেক দেশে বলা হয় ‘সিয়েস্তা’। আর ইংরেজিতে ‘পাওয়ার ন্যাপ’।
ইউরোপের যেসব দেশে গরম আবহাওয়া রয়েছে সেখানকার মানুষের জন্য ভাত-ঘুম দারুণ ভূমিকা পালন করে। যেমন গ্রীস,স্পেন ইত্যাদী। ইউরোপের কিছু শহরে এমনকি সেখানকার মানুষের সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।
লন্ডনের ঘুম বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান দ্যা স্লিপ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, ঘুম বিশেষজ্ঞ গাই মেডোজ জানান, দিনের শুরুতে যে কর্মশক্তি নিয়ে কাজ শুরু করা হয় দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। আর তখনই ন্যাপ বা ভাত-ঘুম দিনের শুরুর কর্মশক্তি শরীরে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
‘আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, আমাদের মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে। আমরা যত বেশি সময় ধরে জেগে থাকি, আমাদের মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে।’
তিনি বলেন, যখন আমরা ন্যাপ নেই তখন এডেনোসিনের ব্যাবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মেজাজ ভালো বোধ করি। এর ফলে বিকেলের দিকে কাজে মনোযোগ বেশি দেয়া সম্ভব হয়, কাজে ভুল করার সম্ভাবনা কমে। ভাত-ঘুম তারমানে হৃদপিণ্ড ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যার কারনে শরীরের আরও অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকবে।
এদিকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইশরাত শারমিন রহমান বলেন, শরীরে মন ভালো রাখার যে হরমোনগুলো রয়েছে ঘুম সেগুলোর ভারসাম্য তৈরি করে ঘুম। বেশি সময় জেগে থাকলে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুমালে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হয়, চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কম ক্ষরণ হয়। মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়, তাতে মনের চাপ, উদ্বেগ দুর হয়, মুড ভালো থাকে, চিন্তার প্রক্রিয়া ভালো কাজ করে। দিনের দিনের মধ্য ভাগে ৯০ মিনিটের সময় ধরে যেহেতু ভাত-ঘুম দেয়া মুশকিল তাই ১০ থেকে ২০ মিনিটকে ভাত-ঘুমের জন্য আদর্শ মনে করা হয়।