মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব প্রশাসনের নিয়োগ পরীক্ষায় চা শ্রমিকদের হেয় করার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিককে ‘কুলি’ সম্বোধন করায় জেলাজুড়ে শুক্রবার ( ৪ মার্চ) থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। শনিবার (৫ মার্চ) মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সচেতন চা শ্রমিক ছাত্র ও যুবকদের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন চা বাগানের ছাত্র-যুবক সংগঠন ও ছাত্র-যুবকবৃন্দ। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একাধিক চা শ্রমিকের সন্তানরা অভিযোগ করে বলেন, প্রশ্নপত্রে ইংরেজিতে অনুবাদ এসেছে ‘শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানী বলা হয়। শ্রীমঙ্গলে ৯২টি চা বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের চা খুব উপাদেয়। কুলিরা হাত দিয়ে চা পাতা সংগ্রহ করে। প্রক্রিয়াজাত চা পাতা থেকে চা উৎপন্ন হয়।’ এসময় তারা প্রশ্নপত্রে চা শ্রমিকদের কুলি বলায় তীব্র নিন্দা জানান।
এ সময় তারা আরো বলেন, চা বাগানে কাজের অভাব। অনেক কষ্ট করে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরির চা শ্রমিক বাবা-মা পড়ালেখা করিয়েছেন। বড় কষ্টে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এই অভাবের গেড়াকলে। ভালো মন নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্নপত্র দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।’
বক্তারা বলেন- অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় না আনা হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। মানববন্ধন কর্মসূচীর সমন্বয়কারি মোহন রবিদাস বলেন- “বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত ও লাঞ্চিত জনগোষ্ঠী হলো চা শ্রমিক। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে একে তো চা শ্রমিকরা কোনভাবেই জীবনযাপন করতে পারছে না। তার উপর বিভিন্ন সময় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কটুক্তি করা হয়। কখনো ‘বাগানী’, কখনো ‘কুলি’ ইত্যাদি অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা হয়। যা খুবই দুঃখজনক।”
তারা আরো বলেন , গত গত ৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের “ক্রেডিট চেকিং-কাম-সায়রাত সহকারি পদের লিখিত পরীক্ষায় চা শ্রমিকদের ‘কুলি’ সম্বোধন করায় আমরা খুবই হতাশ ও মর্মাহত। যেখানে এই নীরিহ চা শ্রমিকদের ‘সামাজিক মর্যাদা’ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। সেখানে ডিসি অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে চা শ্রমিকদের ‘কুলি’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো জানান, আমরা গতকাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানানোর পরেও সংশ্লিষ্ট মহল থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা আমাদের “মান-মর্যাদা” রক্ষার লড়াই রাস্তায় নেমেছি।”
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুড়ভুড়িয়া ইয়াং স্টার সামাজিক সংগঠনের সভাপতি রিপন মৃধা, ভাড়াউড়া যুব উন্নয়ন সংঠনের সভাপতি বিষ্ণু হাজরা রাজু, চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার, হাসিমুন বেগম, কাজল হাজরা, দিপক পাল, সুমন কুর্মী, রিপন বোনার্জী, প্রমুখ।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড দুঃখ প্রকাশ করছে।