মেয়ে ফুটবলাররা সব সময়তো বেতন পাবেন না। এমনটা ছিল বাংলাদেশের ফুটবলের চিরচেনা চিত্রনাট্য। যেন নিয়তি হয়েই দাঁড়িয়েছিল। বেতন-ভাতা না পেয়ে প্রায়ই নারী ফুটবলাররা হতাশার গল্প শোনাতেন। তাদের পারিশ্রমিক না পাওয়ার কত খবরই না শিরোনাম হয়েছে গণমাধ্যমে। সেসব মন খারাপ করা খবর এখন শুনতে হবে না। এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব হয়েছে ফিফার বদৌলতে।
সাবিনা-সানজিদাদের বেতনের জন্য এখন আর পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না বাফুফেকে। স্পন্সর বা পৃষ্ঠপোষক কোম্পানি টাকা দিক বা না দিক, তাতে নারী ফুটবলারদের বেতন বকেয়া পড়বে না আর। বেতন বকেয়া থাকার এখন আর কোনো সুযোগই নেই। কেননা মেয়ে ফুটবলারদের বেতনের পাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছে ফিফা।
প্রতি বছর ফিফা থেকে যে অর্থ অনুদান পায় বাফুফে, সেই তহবিল থেকে এখন মেয়েদের বেতন দিতে পারবে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়েছে ফিফা। এর আগে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থে মেয়েদের বেতন দিতে পারত না বাফুফে। তবে এবার থেকে থাকছে সেই সুযোগ।
মেয়ে ফুটবলারদের বেতন দিতে ফিফার করা স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের ভাষ্য, ‘মেয়েদের বেতনের টাকার জন্য আমরা ফিফাকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিলাম। ফিফা জানিয়েছে, বাফুফেকে তারা যে অনুদান দেয়, সেখান থেকে মেয়েদের বেতন দেওয়া যাবে। আগে আমরা ফিফার অনুদান থেকে মেয়েদের বেতন দিতে পারতাম না। অন্যভাবে জোগাড় করতে হতো। অনুদান থেকে সেটা দিতে পারা মানে আমাদের একটা সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।’
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম সাফ শিরোপা জয়ের পর বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের নারী খেলোয়াড়রা। আর্থিক সংকটের অজুহাতে তাদের সেই দাবি পূরণ করেনি বাফুফে। একবার তো বেতন চেয়ে মেয়েরা অনুশীলনই বন্ধ রেখেছিলেন। পরে ৩১ নারী ফুটবলারের সঙ্গে গত আগস্টে চুক্তি করে বাফুফে। ছয় মাসের সেই চুক্তি চালু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর।
সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন ফুটবলারদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে নতুন চুক্তি করবে বাফুফে। নতুন চুক্তিতে জায়গা পেতে পারেন ৩৪-৩৫ জন ফুটবলার। তবে ফুটবলারদের বেতন আগের মতো থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনাসহ ১৫ ফুটবলার মাসে বেতন পান ৫০ হাজার টাকা করে। ১০ জন ফুটবলার পান ৩০ হাজার টাকা করে। ৪ জন খেলোয়াড়ের বেতন ২০ হাজার টাকা। ২ জনের বেতন ১৮ হাজার টাকা। নারী ফুটবলারদের বেতনের জন্য মাসে দরকার পড়ে ১১ লাখ টাকার বেশি।
আগের চুক্তি শেষ হয়েছে গত মাসে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারির বেতন পেয়েছেন দেশের নারী ফুটবলাররা। এখন চলছে এপ্রিল। সেই বকেয়া বেতনের বেড়াজালে আটকে মন খারাপ হয়েছিল কৃষ্ণা-মারিয়াদের। তবে এবার ফিফার অনুদানে সেই সমস্যার একটা সমাধান হলো তাহলে।